সাপে কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা ও লক্ষণসমূহ বিস্তারিত জানান

আমরা যারা গ্রামে বসবাস করি তারা অনেকেই জানি যে। সাধারণত মে- থেকে অক্টোবর মাসে এই সময়ে ঝড় বৃষ্টি হওয়ার কারণে চারদিকে পানিতে ডুবে থাকে । চারিদিকে ডুবে থাকার কারণে নিচু এলাকা থেকে সাপ উপরের দিকে উঠে আসে।
সাপে-কামড়ানোর-প্রাথমিক-চিকিৎসা-ও-লক্ষণসমূহ

আমরা যেখানে বসবাস করি তার আশপাশে সাঁপ ও থাকতে শুরু করে। বসতবাড়ির ভিতরে গৃহপালিত পশুর থাকার স্থানে এবং বসতবাড়ি ইঁদুরের গর্তের ভিতর সাপ বাসা বাঁধে। আমাদের আশপাশে সাপ বাসা বাধার জন্য অনেক সময় দেখা যায় সাপে কামড়ে অনেক মানুষ মারা যায়।

পেজ সূচিপত্রঃ সাপে কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা ও লক্ষণ সমূহ

সাপে কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা ও লক্ষণ সমূহ

সাপে কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা ও লক্ষণ গুলো বিশেষ করে দেখা যায় অতিরিক্ত যখন গরম পড়ে এবং অতিরিক্ত বর্ষা হয় সেই সময়। হঠাৎ করে শোনা যায় যে কোন এক গ্রামে অমুক ব্যক্তি সাপে কামড়েছে । অনেক সময় দেখা যায় যে প্রাথমিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেক মানুষই সাপের কামড়ে মারা যায়।আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে প্রাথমিক চিকিৎসার কারণে অনেক মানুষ বেঁচে যায়।

 সেজন্য গ্রাম অঞ্চলে আমরা যারা বসবাস করি এবং জঙ্গলের আশেপাশে যাদের বাড়ি আছে তাদের অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে । কারণ জঙ্গলের আশেপাশে যে কোন সময় সাপে কামড়াতে পারে। সেজন্য ভয় না পেয়ে সাপে কামড়ালে প্রাথমিক অবস্থায় কি করা দরকার তা জেনে রাখা আমাদের সকলের প্রয়োজন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সাপে কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা বা সাপে কামড়ানোর লক্ষণসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

সাপে কামড়ালে শান্ত ও স্থির থাকুন

সাপে কামড়ালে ভয় পেয়ে গেলে হিত স্পন্দন বেড়ে যায়, যার ফলে বিশ দ্রুত রক্তই মিশে শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে. তাই প্রথমেই ভয়ের পরিবর্তে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আশ্বস্ত করুন বা সাহস দেন, যে সব সাপ বিষাক্ত নয় এবং সঠিক চিকিৎসা পেলে সুস্থ হওয়া সম্ভব। এভাবে তাকে বুঝাতে থাকুন যাতে করে সে ভয় না পায় শান্ত থাকে।

কামড়ানোর অঙ্গের নড়াচড়া কম করার চেষ্টা করা

সাপে কামড়ালে বিশ শরীরে ধীরে ধীরে ছড়ায়, সেজন্য কামড়ানো অঙ্গটি যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করুন। যে স্থানে কামড়েছে হাত বা পা সেটি নিচু করে রাখুন এবং একেবারে অপোজনীয় নড়াচড়া এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ যত দ্রুত নড়াচড়া করবেন বিশ রক্তে মিশে যে আপনার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে পারে।

ক্ষতস্থান পরিষ্কার করুন কিন্তু কাটা চামড়া চেপে ধরবেন না

সাপে কামড়ালে জায়গাটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। চেপে ধরবেন না বা কেটে বিশ বের করার চেষ্টা করবেন না। এটি রক্ত প্রবাহ দ্রুত করে আরো ছড়িয়ে দিতে পারে।

সাপের রঙ ও চেহারা লক্ষ্য করুন

সাপে কামড়ানোর পর দূরত্ব সাপটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন, তবে সাপ ধরার বা মারার চেষ্টা করবেন না। এর বদলে সাতটি দেখতে কেমন ছিল তা মনে রাখার চেষ্টা করুন অথবা সঙ্গে যদি মোবাইল থাকে তাহলে ছবি তুলে রাখুন। আর যদি সঙ্গে মোবাইল না থাকে তাহলে কিভাবে চিনবেন তা নিম্নে বর্ণনা করা হল।
  • রঙঃ বিষাক্ত সাপের রং সাধারণত উজ্জ্বল হয়, তবে এটি সব সময় প্রযোজ্য নয় ব্যতিক্রমও হতে পারে।
  • শরীরের নকশাঃ কিছু সাথে শরীরে ফোটা, ডোরা বা নির্দিষ্ট ধরনের দাগ থাকতে পারে যা সনাক্তকরণের সহায়ক।
  • মাথারআকৃতিঃ বিষাক্ত সাপের মাথায় সাধারণত ত্রিভুজাকৃতির হয়, তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে।
  • চোখের মনিঃ বিষাক্ত সাপের চোখ সাধারণত লম্বাটে বিড়ালের মত আর নির্বিশেষ সাপের চোখ গোলাকার হয় অনেক সময় এর ব্যতিক্রম হতে পারে।

কামড়ের দাগ পর্যবেক্ষণ করুন

পর্যবেক্ষণ করা যায় সাপটি বিষাক্ত কিনা। কামড়ের দাগ দেখে কিভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন সাতটি বিষাক্ত কিনা তা নিম্নে বলা হলো।

কামড়ের-দাগ-পর্যবেক্ষণ-করুন

  • দুটি গভীর দাঁতের দাগঃ বিষাক্ত সাপ সাধারণত দুইটি লম্বা বিষ দিয়ে কামড় দেয়। যদি কামড়ানো স্থানে বসে থাকে তাহলে বুঝবেন। এটি বিষাক্ত সাপে কামড়েছে।
  • চার বা বেশি সরু দাগঃ নির্বিশেষ সাপের দাঁত অনেক ছোট ও সমান হয়, তাই এর কামড়ে অনেকগুলো ছোট দাগ দেখা যায়। যদি কামড়ের দাগ অনেকগুলো ছোট ছোট হয় তাহলে ভাববেন এটি নির্বিষ সাপে কামড়েছে।
  • রক্ত ও ফোলাঃবিষাক্ত সাপ কামড়ালে সাধারণত কামড়ের জায়গায় তীব্র ব্যথা , ফোলা ,রক্তপাত ও কালচে ভাব দেখা যেতে পারে।
  • বিষাক্ত সাপ কামড় দিলে মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্, ঝাপসা দেখা বেশি দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • কিছু বিষাক্ত সাপের বিষ রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না, ফলে কামড়ানো জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না।

সাপে কামড়ালে কি করবেন এবং কি করবেন না

কি করবেনঃ
  • সাপে কামড়ানোর পর দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
  • কামড়ালে জায়গা নিচু করে রাখুন, যাতে বিষ শরীরে ছড়িয়ে না পড়ে।
  • কামড়ালে জায়গায় কোন ব্যান্ডেজ বা দড়ি খুব শক্ত করে বাধবেন না বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ ছাড়া।
কি করবেন নাঃ
  • সাপ ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না।
  • কামড়ালে বের করার চেষ্টা করবেন না।
  • কোন ধরনের ঘরোয়া চিকিৎসার উপর নির্ভর করবেন না।
  • বেদ বেদা বা কবিরাজের উপর নির্ভর করে থাকবেন না।

সাপ কেন কামড়ায়/ সাপ কামড়ানোর কারণ কি

সাপে কামড়ানোর প্রধান কারণ হলো আত্মরক্ষা, খাবারের সন্ধান, বা দুর্ঘটনাবশত মানুষের সংস্পর্শে আসা। সাধারণত সাপ-নিচ থেকে কাউকে কামড়াতে চায় না, তবে যদি তারা হুমকি সম্মুখীন হয় এবং হঠাৎ ভয় পাই।তখন তারা আত্মরক্ষার্থে কামড় দিতে পারে। সাপ কামড়ানোর কারণ নিচে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো-
আত্মরক্ষাঃ সাপ মানুষের স্বাভাবিক শত্রু নয় কিন্তু যদি তারা হঠাৎ ভয় পায় বা নিজেকে হুমকির মুখে মনে করে তখন আত্মরক্ষার্থে কামড় দিতে পারে। যেমন-
  • যদি কেউ সাপের উপরে পা দেয়
  • লাঠি দিয়ে আঘাত করে
  • সাপের বেশি কাছে চলে যায়
শিখার ধরতেঃ সাপ তাদের খাবারের জন্য ছোট প্রাণীদের অর্থাৎ ইঁদুর ব্যাঙ পাখি ইত্যাদি কামড়ায। তাদের স্বীকার করার জন্য কামড়ায় কামড়িয়ে ঘায়েল করে তারপরে তাদের খায়।
দুর্ঘটনা বসত বা মানুষের ভুলেঃ অনেক সময় ঘরের আশেপাশে বা জঙ্গলে চলাফেরার সময় অসতর্কতা ভাবে সাপকে বিরক্ত করলে বা ধরার চেষ্টা করলে তারা কামড় দিতে পারে।

সাপে ডিম দেয় না বাচ্চা দেয় কতটি করে দেয়

সাপের প্রজাতি ভেদে কিছু সাদ ডিম দেয় এবং কিছু সাপ সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে সাধারণত ৭৫ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে কিছু সাধারণ সাপের ডিমের সংখ্যা দেয়া হলো।

সাপে-ডিম-দেয়-না-বাচ্চা-দেয়-কতটি-করে-দেয়

  • গোখরা সাপ-টি ১০ থেকে ৩০ টি পর্যন্ত ডিম দেয়।
  • পাইথন সাপ - ২০টি থেকে ১০০ টি পর্যন্ত ডিম দেয়।
  • দুধ সাপ-৫ থেকে ২০টিপর্যন্ত ডিম দেয়\।
রাসেল ভাইপার এবং গাটার সাপ উভয় ডিম নয় সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।
  • রাসেল ভাইপার এটি একবারেই২০-৬০ পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করতে পারে।
  • বাচ্চাগুলো জন্মের পর পরই শক্তি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় এবং স্বীকার ধরতে সক্ষম।
  • গাধার সাপ এটি একবারে১০-৪০ টি বাচ্চা প্রসব করতে পারে।
কিছু প্রজাতির ৫০ টি বেশি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে, তবে ঘরে ১৫থেকে২০ টি বাচ্চা হয়।
বাচ্চাদের সুরক্ষার জন্য তেমন যত্ন নেয় না, বরং বাচ্চারা নিজেরা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে।

উপসংহার/সাপে কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা ও লক্ষণসমূহ

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, সাপে কামড়ালে প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম । আমার এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ের উপর পোস্ট লেখা হয়। আপনি যদি এই পোস্টটি পড়ে সামান্য পরিমাণও উপকৃত হয়ে থাকেন এই ধরনের আরো অনেক পোস্ট করতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আপনার মঙ্গল কামনা করে আজ এখান নেই শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

www.alltipsatoz.comনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url